কোন চা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
চা কি?
চা হলো সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট এক ধরনের উষ্ণ পানীয় যা চা-পাতা পানিতে ফুটিয়ে বা গরম পানিতে ভিজিয়ে তৈরী করা হয়। এই কৃষিজাত পণ্যটি চা-গাছের পাতা, পর্ব ও মুকুল প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে পান করার উপযোগী করে তোলা হয়। খাবার পানির পরেই স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক স্বাদ উপভোগ্য এই পানীয় মানুষের কাছে সর্বাধিক উপভোগ্য। গ্রিকদেবী থিয়ার নামানুসারে চায়ের নামকরণ করা হয় Tea, চীনে ‘টি’-এর উচ্চারণ ছিল ‘চি’, পরে তা হয়ে যায় ‘চা’।
চায়ের ইতিহাস
প্রায় ২৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে চীনে চা পাওয়া যায়। তাই চীনকে চায়ের আদি জন্মভূমি বলা হয়। হাজার বছর ধরে তাজা পাতা পানিতে সিদ্ধ করে তা ঔষধি পানীয় হিসেবেই ব্যবহার করা হতো। কিন্তু খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দীর দিকে নিত্য পানীয় হয়ে ওঠে এবং চা চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হয়। এরপর ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীন বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু করে। ভারতবর্ষে ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে চায়ের চাষ শুরু হয়। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা সিলেটে সর্বপ্রথম চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক চাষ।
চায়ের প্রকারভেদ
প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুসারে চা-কে প্রধান ৫টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়-
- কালো চা (Black Tea)
- সবুজ চা (Green Tea)
- ইষ্টক চা (
- উলং বা ওলোং চা (Oolong Tea)
- প্যারাগুয়ে চা (Paraguay Tea)
এছাড়াও, সাদা, হলুদ, পুয়ের চাসহ আরো বিভিন্ন ধরনের চা রয়েছে। প্রায় সবরকম চাই ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থেকে তৈরি করা হলেও বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করার কারণে এক এক ধরনের চা এক এক রকম স্বাদযুক্ত হয়।
চা পাতার গ্রেড চেনার উপায়
চোখ-কান খোলা লোকেরা নামের দিক থেকে নয় বরং তারা চা পাতার গুণাগুণ বিবেচনা করেন গ্রেড দিয়ে। সচরাচর আমরা যে চা খাই সেই রং চা কে অর্থোডক্স বা সিটিসি (ক্রাশ-টিয়ার-কার্ল) পদ্ধতিতে চা পাতার সাইজ অনুসারে গ্রেডিং করা হয়। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বা অক্ষত পাতা থেকে বানানো চা সবথেকে দামি চা। তবে বড় পাতার থেকে কচি পাতা বা কুঁড়ি থেকে তৈরি চা-তে ক্যাফেইনের মাত্রা বেশি থাকে। চায়ের প্যাকেট কেনার আগে নিচে দেওয়া চায়ের বিভিন্ন গ্রেড সম্পর্কে জেনে নিন (এই ক্রম অনুযায়ী যত নিচের দিকে যাবেন ততই চায়ের মানের সাথে দামও কমতে থাকবে):[1]
সম্পূর্ণ পাতার চা (Whole leaf tea):
- FTGFOP1 (Fine Tippy Golden Flowery Orange Pekoe Grade 1)
- FTGFOP (Fine Tippy Golden Flowery Orange Pekoe)
- TGFOP (Tippy Golden Flowery Orange Pekoe)
- TGFOP1 (Tippy Golden Flowery Orange Pekoe Grade One)
- GFOP (Golden Flowery Orange Pekoe)
- FOP (Flowery Orange Pekoe)
- OP (Orange Pekoe)
- OPA (Orange Pekoe A)
- FP (Flowery Pekoe)
- P (Pekoe)
- S (Souchong)
আংশিক ছেঁড়া পাতার চা (Broken-leaf tea):
- BOP1 (Broken Orange Pekoe One)
- GFBOP (Golden Flowery Broken Orange Pekoe)
- TGFBOP (Tippy Golden Flowery Broken Orange Pekoe)
- TGFBOP1 (Tippy Golden Flowery Broken Orange Pekoe Grade One)
- BS (Broken Souchong)
- BPS (Broken Pekoe Souchong)
- GBOP (Golden Broken Orange Pekoe)
- FBOP (Flowery Broken Orange Pekoe)
- BOP (Broken Orange Pekoe)
অপেক্ষাকৃত বেশি অংশ ছেঁড়া পাতার চা (Fannings):
- GOF (Golden Orange Fannings)
- FOF (Flowery Orange Fannings)
- BOPF (Broken Orange Pekoe Fannings)
- FBOPF (Flowery Broken Orange Pekoe Fannings)
গুড়া বা ডাস্ট চা (Dust):
- OPD (Orange Pekoe Dust)
- BOPD (Broken Orange Pekoe Dust)
- BOPFD (Broken Orange Pekoe Fine Dust)
- FD (Fine Dust)
- D-A (Dust A)
- Spl. D (Special Dust)
- GD (Golden Dust)
- OD (Orthodox Dust)
কোন চা স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী? রং চা নাকি দুধ চা?
চিকিৎসকদের মতে, যাঁরা নিয়মিত চা খান, তাঁদের অবশ্যই জানা প্রয়োজন যে দুধ চায়ের চেয়ে রং চা শরীরের জন্য বেশি উপকারী। চায়ের মধ্যে ট্যানিন নামের একটি উপাদান খাদ্যনালির ক্যানসারের কারণ হতে পারে। চুলায় চা পাতা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দিলে চায়ের ট্যানিন বেশি বের হয়।
রং চা | দুধ চা |
রং চা রক্তনালির প্রসারণ ঘটায় যা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত জরুরি। | অন্যদিকে দুধের মধ্যে থাকা ক্যাসেইন নামের পদার্থ থাকে, যা চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাটেচিনকে বাধাগ্রস্ত করে। এতে চায়ে দুধ মেশালে চায়ের রক্তনালি প্রসারণের ক্ষমতা একবারেই চলে যায়। |
চায়ের প্রভাবে কোষগুলো থেকে সাধারণের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন নির্গত হয়। | কিন্তু চায়ে দুধ মেশালে এই ইনসুলিন নির্গমনের হার কমতে থাকে। চায়ে যদি ৫০ গ্রাম দুধ মেশানো হয়, তাহলে ইনসুলিনের নির্গমন ৯০ শতাংশ কমে যায়। |
রং চা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। | কিন্তু দুধ চা ততটা নয়। |
দৈনন্দিন পানের জন্য জ্বাল না দিয়ে টি ব্যাগ দিয়ে রং চা ভালো | সাধারণত চায়ের দোকানে চা–পাতা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দেওয়ার ফলে ট্যানিন বেশি বের হয়, এ রকম চায়ের ক্ষেত্রে কিছু দুধ দরকার। এই দুধ চায়ের ট্যানিনকে আঁকড়ে ধরে এবং তাকে শরীরে মিশতে দেয় না। এজন্য বেশি জ্বালের চায়ের ক্ষেত্রে দুধ মেশালে উপকার পাওয়া যেতে পারে। |
References:
[1] Britannica.com
[2] Quora.com
[3] Cbna24.com
One Comment