Book Reviews

সোনালী দুঃখ বই রিভিউ: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

গল্পের সেই ৯০০ খ্রিস্টাব্দের ইউরোপের তিনটি রাজ্য কর্নওয়েল, লিওনেস, আয়ারল্যান্ড এর পটভূমি ঘিরে উপন্যাসের গল্প।। ত্রিস্তান ও ইসোল্ট-এর অমর প্রেম-কাহিনী অবলম্বনে লেখা গল্পই মূলত এই উপন্যাসের ভিত্তি। উপন্যাসটি বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে লেখা হলেও বেশ কিছু জায়গায় অবাস্তব ও কল্পকাহিনীর মতো তুলে ধরা হয়েছে যা লেখক বইয়ের শেষের দিকে এসে কিছুটা স্বীকারও করে নিয়েছেন।

সোনালী দুঃখ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র

গল্পের প্রধান চরিত্র ত্রিস্তানের জন্মের আগেই পিতার এহলোক বিদায় ঘটে। যখন তিনি দুনিয়ায় ভুমিষ্ট হন তখন মাকেও হারান। এমন হতভাগা সন্তানের নাম তো দুঃখই হওয়ার কথা। বাবা মা ও রাজ্য হারানো ছেলেটি একসময় একজন শক্তিশালী যোদ্ধা হয়ে সকলের মন জয় করেন। জীবনের আসল দুঃখটা শুরু হয় এরপর থেকেই। এই দুঃখ নামের গুণাগুণ জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত বহন করে গেছেন। দুঃখই যেন তার চিরসাথী ছিল এই ব্যপারটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় খুব ভালোভাবেই উপস্থাপনা করেছেন।

সোনালীর সাথে ত্রিস্তানের সম্পর্কের সূত্রপাত

সোনালী দুঃখ মূলত উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ও প্রেমিক-প্রেমিকার নাম। সোনালী হলো শত্রু দেশের এক রাজকুমারীর নাম যাকে খুঁজতে যেয়ে ত্রিস্তানের জীবন সংকটের মধ্যে পড়ে। বিরত্বের জন্য শত্রু হওয়া স্বত্ত্বেও ত্রিস্তানের সাথে রাজকুমারী সোনালী বিয়ের প্রস্তাব দেন। ‍কিন্তু নিজের করা অঙ্গীকারের প্রতি সম্মান রেখে পিতৃতুল্য রাজাকে কথা দেওয়ার কারণে সোনালীকে বিয়ে না করে রাজার রাণী করার জন্য তাকে নিয়ে আসেন। কিন্তু নদীপথে দূর দেশে আসার সময় সোনালী ও তার হবু স্বামী মার্কের জন্য মায়ের দেওয়া বিশেষ সোরাব অনাকাঙ্খিতভাবে দুজনে পান করে ফেলে। এর ফলে ত্রিস্তান ও সোনালীর মধ্যে এক প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লেখকের এই ভালোবাসা দৃঢ় করা বিশেষ সোরাবের ব্যাপারটি আমার কাছে মোটেই বাস্তব সম্মত মনে হয়নি। যাহোক, তারপর তাদের মধ্যে আরও যে গভীর সম্পর্কের ব্যাপারটি লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন সেটি নিছক পাঠক আকৃষ্ট করার জন্যই তুলে ধরা হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে।

তবে রাজা মার্কের হাতে তুলে দিয়ে ও তাদের বিবাহ পরবর্তী ১ম রাতে সোনালীর বান্ধবী বিরাজের যে ত্যাগ সেটির জন্য গল্পের সেরা নারী চরিত্র হিসেবে বিরাজকেও ভাবা যেতে পারে।

সোনালী দুঃখের কিছু অসংগতি

পরে সোনালী ও ত্রিস্তানকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা আরও বেশি বাস্তবধর্মী করা গেলে আরও ভালো লাগতো। গল্পে ত্রিস্তানের জন্য তার গুরুর আত্মত্যাগ ছিল মনে রাখার মতো। শেষের দিকে রুপালীর সাথে ত্রিস্তানের বিয়ে এবং বিয়ের পর ত্রিস্তানের উড়ালপঙ্খি মন আবার সোনালীর জন্য ব্যাকুল হওয়া। শেষ পরিণতিতে ত্রিস্তানের করুন জীবন ও একপর্যায়ে উভয়ের মৃত্যু পাঠককে ব্যথিত করতে বাধ্য করেছে।

রাগঢাক না করেই বিব্রতকর কিছু উপস্থাপনা করেছেন

*বইটির মধ্যে রাগঢাক বাদ দিয়ে পরকিয়াকে যেভাবে সাধারণ ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা ছিল ভিষন দৃষ্টিকটু। সেই সাথে ব্যথীত করেছে ব্যক্তি হৃদয়। আর এ জন্য মুসলিম ভাই-বোন যাদের নিজের প্রতি কন্ট্রোল কম তাদের বইটি পড়া থেকে বিরত থাকতে বলবো।

বইয়ের নামঃ সোনালী দুঃখ
লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (নীললোহিত)
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯

সোনালী দুঃখ বইয়ের লিংক

আমাদের সকল বইয়ের রিভিউ দেখতে এখানে যান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button