ভুঁড়ি কমাতে যে অভ্যাসগুলো ছাড়তে হবে: নারী-পুরুষ
যে ছোট ছোট অভ্যাসগুলো আমাদের পেটে মেদ জমিয়ে তোলে এমন কিছু অভ্যাসের কথা আজকে আলোচনা করব। এই লিস্টের কিছু অভ্যাস হয়তো আপনাকে আশ্চর্য করবে! আর কিছু হয়তো আপনি আগে থেকেই জানেন। আজকে প্রত্যেকটি বিষয় বুঝিয়ে বলবো ও সমাধানে আলোচনা করব।
প্রত্যেক বেলা খাবার মিস না করা
অনেকেই সকালের নাস্তা বাদ দিয়ে একবারে দুপুরে খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা করেন। একবেলা খাবার বাদ দিলে পরবর্তীতে বেশি খাবার খাওয়া বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা অনেকের ক্ষেত্রে বেড়ে যায়। এতে ওজন ও মেদ ভুঁড়ি বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদি আপনার ক্ষেত্রেও এমনটি হয় তাহলে একবেলার খাবারও বাদ দেবেন না। কখনো যদি একবেলা খাওয়া বাদ পড়েই যায় তখন সতর্ক থাকবেন যেন পরের বেলায় অতিভোজন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়া হয়।
টেলিভিশন দেখার সময় না খাওয়া
টিভিতে খেলা, নাটক, সিরিয়াল বা অন্য কিছু দেখতে দেখতে খাওয়ার অভ্যাস থাকলেও পেটে মেদ জমাতে পারে। যদি প্রশ্ন করেন কিভাবে? আসলে সমস্যাটা কিন্তু টেলিভিশন, সিরিয়াল বা খেলার না। এখানে সমস্যাটা হচ্ছে মনের সুখে আনমনা হয়ে খাওয়ার। কারণ আপনি যখন আরেকটা কাজে ব্যস্ত তখন কতটুকু খাচ্ছেন সেটার দিকে সাধারণত মনোযোগ কম থাকে। তাই যত টুকু খাওয়ার দরকার তার চেয়ে বেশি খাওয়া হয়ে যেতে পারে৷ তাছাড়া ক্ষুধা না লাগলেও অনেকে ভাবেন টেলিভিশন দেখার সাথে সাথে কিছু একটা না খেলে জমেই না। আবার এই খাবারগুলো অনেক সময় স্বাস্থ্যকরও হয় না। দেখা যায় ভাজা পোড়া, মুড়ি চানাচুর এ সব খাবার এক হাতে নিচ্ছি আর খাচ্ছি, নিচ্ছি আর খাচ্ছি। এই অস্বাস্থ্যকর খাবারে পরিমাণে অতিরিক্ত ক্যালোরি থাকতে পারে। এসব কারণে শরীরে চর্বি জমার ক্ষেত্র তৈরি হয়। তাহলে সমাধান হিসেবে কোন কোন সময়ে আপনি আনমনে খাবার খান সেটা খুঁজে বের করবেন।
নিজেকে মানসিক চাপমুক্ত রাখা
মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণে মেদ ভুড়ি জমে এবং এটা হয় কয়েক ভাবে। আমরা যখন দিনের পর দিন মানসিক চাপে ভুগতে থাকি তখন আমাদের শরীরে কর্টিসল নামের হরমোন নিঃসরণ হয়। এটি এমন হরমোন যা বাড়লে অতিরিক্ত চিনি বা চর্বি যুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা জাগ্রত হতে পারে। ওজন বা মেদ ভুঁড়ি বাড়াতে কর্টিসলের প্রভাব এখানেই শেষ না। সে আরো কিছু কাজ সে করে।
- এটি শরীরে অন্যান্য জায়গা যেমন পিঠ, ঊরু, নিতম্ব এই সমস্ত জায়গার চেয়ে পেটের অংশের চর্বি বাড়াতে বিশেষ সাহায্য করে। কর্টিসল এটাকে আমরা বলি সেন্ট্রাল উপস্থিতি।
- আরেকটা হরমোন কে বাড়িয়ে দেয় যে হরমোন যা আমাদের বেশি করে ক্ষুধা অনুভব করায়।
- লেপটিন নামে এক হরমোন কমিয়ে দেয়। যেটা আমাদের পেট ভরা অনুভব করায়।
তাহলে সামারিটা দাড়ায়- এর জন্য পেট ভরেনি মনে হয়ম আর ক্ষুধা লাগে বেশি। এই বেশি খেওয়ার ফলে যে চর্বিটা হয় সেটা পেটের অংশে জমিয়ে ভুড়ি বড় করে।
নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, পছন্দের কাজ, মেডিটেশন, প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখবেন।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কম ঘুমের সাথে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। আপনি যখন রাত জাগেন তখন কিছু খেতে ইচ্ছা করতে পারে। কিন্তু এই সময় ঘুমিয়ে থাকলে ঐ অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হত না। আবার রাত জেগে কাজ করার সময় আমরা যে খাবার গুলো সাধারণত খাই সেগুলো প্রায় সবই ক্ষতিকর। ফ্যাট বা চিনিযুক্ত খাবার বা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাই। বর সময় খাবার স্বাস্থ্যকর কি না তা নিয়ে অতটা চিন্তা আমরা সাধারণত করিনা। আর তারপর যদি নিয়মিত ঘুম কম হয় তখন সেটা মানসিক চাপ বা স্ট্রেস তৈরি করতে পারে। সেই স্ট্রেস আবার বিভিন্ন ভাবে বাড়তি ওজন এবং ভুড়ি বাড়ার কারণ হতে পারে। তাছাড়া পরিমাণ মতো না ঘুমালে চেহারার কি হতে পারে সেটি নিয়ে এখানে একটি আর্টিকেল আছে দেখে নিবেন।
দ্রুত না খাওয়া
আপনি যখন খাবার খাওয়া শুরু করেছেন সেই খাবার পেটে যায় এবং পেটের সাথে আপনার ব্রেনের কথাবার্তা হয় পেট ভরেছে কিনা। এটা ব্রেনের জানতে ২০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আপনি যদি দ্রুত খান তাহলে বেশি খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে কারণ মস্তিষ্ক হয়তো তত দ্রুত পেটের কাছ থেকে জেনে আপনাকে বলতে পারবে না যে আপনার পেট ভরে গেছে। সমাধান হচ্ছে ধীরে ধীরে খাবারের প্রতি মনোযোগ দিয়ে খাওয়া, যেটাকে আমরা মাইন্ ফ্লিটিং বলি। আর যদি খুব দ্রুত খেতেই হয়। তাহলে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার নিয়ে সেখানেই খাওয়া শেষ করবেন।
অতিরিক্ত না খাওয়া
কত সময় নিয়ে খাচ্ছেন এটা মূল বিষয় না। মূল বিষয় হচ্ছে আপনি পরিমাণে কতটুকু খাচ্ছেন। প্লেটটা বড় হলে সাধারণত খাবার একটু বেশি পরিমাণে নেওয়া হয়। আর আমরা সাধারণত প্লেটে যতটুকু খাবার নেই পুরোটাই শেষ করে উঠতে চাই। হয়তো কিছু বাকি থাকতে আমার মনে হচ্ছে পেট ভরে গেছে। কিন্তু প্লেটে যেহেতু খাবার আছে সেই খাবারটা রেখে আমরা উঠতে চাই না। আর এভাবেই না চাইলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায়। তাই শুরু থেকেই যদি প্লেটটা আকারে একটু ছোট হয় বা খাবার নেওয়ার সময় আমরা পরিমাণটা খেয়াল রাখি তাহলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
স্বাস্থ্য ক্যাটাগরীর সকল আর্টিকেল এখানে