কিভাবে ভালো স্বামী হওয়া যায়: Good Husband
আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন কিংবা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা ভেবে থাকেন তবে অবশ্যই আর্টিকেলটি আপনার একবার পড়া উচিৎ। একটা ছেলে প্রকৃতপক্ষে বিয়ের পরেই পুরুষ হয়ে ওঠে। আর বিয়ের পরে স্ত্রীর কাছে ভালো স্বামী হওয়ার চ্যালেঞ্জ চলে আসে। স্ত্রীর কাছে ভালো স্বামী হওয়া কষ্টকর হলেও অসম্বব না। আজকের এই আর্টিকেলে এমনি কিছু টোটকা শেয়ার করার চেষ্টা করবো যেগুলো মেইনটেইন করতে পারলে আপনি সেরা স্বামীদের একজন হয়ে উঠতে পারেন। আসলে অনেক স্বামী নিজের স্ত্রীর প্রতি এক সীমাহীন উদাসীনতার পরিচয় দেন। এই উদাসীনতার মাত্রা একসময় এতাটাই তীব্র থেকে তীব্রতায় রুপ নেয় যে তারা একে অপরের সাথে কথা বলার সময় পর্যন্ত পান না। আর যদি এমন হয়েই যায় তাহলে বুঝতে হবে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটা আক্ষরিক সম্পর্ক মাত্র যেখানে পরস্পরের কাছে কোন সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ এমনকি ন্যূনতম ভালবাসাটুকুও হয়তো বিলীন হতে বসেছে।
দাম্পত্য জীবন সুখের করতে স্বামীর ভূমিকাও স্ত্রীর মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আগের যুগে পুরুষ ছিল উপার্জনকারী আর মহিলা ছিল পরিচর্যাকারী। বিবাহের পর ভালো স্বামী হওয়ার জন্য কি কি করতে হয় দেখে নেওয়া যাক:
স্ত্রীর সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়া
বিয়ের সাথে সাথে বাবার বাড়ীর সাথে স্ত্রীদের দুরত্ব বাড়তে থাকে। কেউ স্বীকার করুক বা না করুক এটাই বাস্তবতা। সব ছেড়ে সে স্বামী ও স্বামীর পরিবারে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে তাইতো স্বামীকে কোন শর্ত ছাড়াই সহধর্মিনীর সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে হবে। তবে ভালোবাসার শর্ত থাকতে পারে।
স্ত্রীকে আগলে রাখুন
আপনার স্ত্রী কি কখনও আপনাকে বলেছেন যে, যেকোন জায়গা আপনার উপস্থিতিতে সে নিরাপদ বোধ করে? যদি না বলে থাকে তবে জানার বা বোঝার চেষ্টা করুন। কারণ সব ধরণের পরিস্থিতিতে তাকে আগলে রাখা আপনার দায়িত্ব। সেটা হতে পারে শারীরিক, মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিক যেকোন ই হোক না কেন – একজন স্বামীকে অবশ্যই তার স্ত্রীকে তার ক্ষতি করতে পারে এমন কিছু থেকে রক্ষা করতে হবে।
বন্ধুর মতো সম্পর্ক গড়া
বাইরে যেমন আপনার খুব ক্লোজ বন্ধু থাকে তেমনি স্ত্রীর সাথে স্বামীর সম্পর্কটা সবচেয়ে ক্লোজ বন্ধুর মতো গড়ে তুলতে হবে। বন্ধুত্ব গড়ার এই দায়িত্ব স্বামীকেই নিতে হবে। কারণ স্ত্রী হয়তো প্রথমদিকে এই সাহস বা এগিয় আসতে ইতস্তত বোধ করতে পারেন।
স্ত্রীকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসা
বিবাহের ভিত্তি হলো ভালবাসা এবং বিশ্বাস। আপনি তাকে মানষিক সন্তুষ্টি দিতে কোন শর্ত ছাড়াই ভালোবাসুন, তার কথার মূল্য দিন ও সম্মান করতে শিখুন। শুধু মৌখিকভাবে নয়, এটি আপনার দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমেও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন।
তার চাহিদা এবং ইচ্ছা পূরণ করুন
আপনি যে ধর্মেরই অনুসরণ করেন না কেন, প্রতিটি পুরুষ এবং স্ত্রী বিবাহের মাধ্যমে যে সম্পর্কে জড়ান তার মধ্যে একটি হল একে অপরের চাহিদা এবং ইচ্ছা পূরণ করা তাদের কর্তব্য।
স্ত্রীর সাথে ভাল আচরণ করুন
যেকোন পরিস্থিতিতে সহধর্মিনীর সাথে ভালো আচরন করতে হবে। মনে রাখা দরকার চিল্লাপাল্লা বা খখারাপ ব্যবহার সমস্যা সমাধানের চেয়ে সমস্যা বাড়াতেই থাকে। তাই মেজাজ খারাপের সময় যতোটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
স্ত্রীর সাথে সময় কাটানো
স্বামী হিসেবে আপনি স্ত্রীকে যথেষ্ট সময় না দিলে তাদের মধ্যে এমনও চিন্তা তৈরি হয় যে, স্বামীর কাছে হয়তো তিনি দ্বিতীয় সারির পছন্দ। প্রথম পছন্দের তালিকায় হয়তো অন্য কোন মানুষ বা কাজকে স্বামী প্রাধান্য দিচ্ছে। অথচ প্রত্যেক স্ত্রী চাই তার স্বামীর কাছে সেই হবে এক ও মুখ্য ব্যক্তি। অর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ স্ত্রীকে সামান্যতম সময়টুকুও না দেয় তাহলে বুঝতে হবে সেই স্বামী সময় কাটানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে স্ত্রীকেও খেয়াল রাখতে হবে এটার জন্য তিনি দায়ী কিনা।
আপনার স্ত্রীকে সম্মান করুন
আপনি যেমন তার কাছ থেকে সম্মান আশা করেন তিনিও কিন্তু আপনার কাছে তার প্রতি আপানার সম্মান আশা করেন। সম্মান জায়গাতে অবহেলা করা চলবে না।
তাকে গৃহস্থালীর কাজে সাহায্য করুন
হাদিসে ঘরোয়া কাজের বিবরণ দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘রাসুল (সা.) নিজ হাতেই তার পরিধেয় কাপড় সেলাই করতেন। প্রয়োজনে নিজের জুতা নিজেই সেলাই করে নিতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৭৫৬)
স্ত্রীর সামনে পরিপাটি থাকা
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর জন্য পরিপাটি থাকতে পছন্দ করি, যেমন আমিও চাই স্ত্রী আমার জন্য সাজুক।’ (বাইহাকি, হাদিস : ১৪৭২৮)
নিজের ইচ্ছা স্ত্রীর উপর চাপিয়ে না দেওয়া
অনেক বিষয় আছে যা আপনার কাছে ভালো লাগলেও স্ত্রীর কাছে ভালো লাগে না। এমন কোন কিছু তার উপর চাপিয়ে না দেওয়া উত্তম।
ব্যক্তিগত কাজে স্ত্রীর মতামত
রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু ঘরোয়া বিষয়ই নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রেও নিজের স্ত্রীদের থেকে মতামত নিতেন। ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে নবীজির স্বীয় স্ত্রী উম্মে সালমা (রা.)-এর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময় যা অতি কার্যকরী বলে বিবেচিত হয়। (বুখারি, হাদিস : ২৭৩১)
স্ত্রীর ভুল শুধরে দেওয়া
আদর্শ স্বামী হলে তিনি সবসময় আপনার ভুল না ধরে উল্টো স্ত্রীর ভুল গুলো সুধরানোর মাধ্যমে তাকে আরও কোয়ালিটি মানুষ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।
কঠিন পরিস্থিতি সামলানোর সক্ষমতা গড়ে তোলা
একজন আদর্শ স্বামীকে সংসার জীবনের যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো মনমানষিকতাও থাকতে হবে। তিনি কখনো বিপদ দেখলে ভয় পান না এবং যেকোনো সমস্যা সমাধানে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। এতে স্ত্রীর মনোবল ভালো থাকে।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সদকাহ সমূহ
স্ত্রীকে লোকমা তুলে দেওয়া সদাকাহ।
স্ত্রীকে নতুন কাপড় পড়তে দেওয়া সদাকাহ।
স্ত্রীর সাথে সহবাস করা সদাকাহ।
স্ত্রীর সাথে ভালো আচরণ করা সদাকাহ।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সুন্নাত সমূহ
স্ত্রী কোলে মাথা রেখে কোরআন তিলোয়াত করা সুন্নাত।
নামাযে যাওয়ার আগে স্ত্রীকে চুম্বন করা সুন্নাত।
স্ত্রীকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া সুন্নাত।
দুজনের মধ্যে খেলার প্রতিযোগিতা করা সুন্নাত।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ফরয সমূহ
স্ত্রীর হক আদায় করা ফরয।
স্ত্রীর ইজ্জতের হেফাজত করা ফরয।
স্ত্রীর মা বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করা ফরয।
স্ত্রীর খাদ্যের ব্যবস্থা করা ও পর্দায় রাখা ফরয।
আলোচিত বিষয়বস্তু মেনে চললে পরিবারে সুখ-শান্তির সাথে সাথে প্রচুর সওয়াব পাওয়া যাবে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করেছেন- তোমার স্ত্রীর জন্য যা কিছু ব্যয় করবে, তার জন্য তুমি দ্বিগুন পরিমাণ সওয়াব পাবে।
ভালো স্বামী পাওয়ার দোয়া
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা হাব্লানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুর্রিয়াতিনা কুর্রাতা আইয়ুনিও ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।’
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে (পুরুষদেরকে) মুত্তাকি লোকদের নেতা বানিয়ে দাও।’ (সুরা ফুরক্বান : আয়াত ৭৪)
আরও পড়তে পারেন…
আপনার স্বামী জন্য তাক লাগানো গিফট আইডিয়া
লাইফস্টাইলের সকল আর্টিকেল এখানে পড়ুন