Great News! এডমিশন ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য খুব দরকারী অ্যাপ Admission Assistant
EducationLifestyle

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হিজাব বিতর্ক : সমাধান কোথায়?

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাবি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, পূর্ব বাংলার মুসলমানদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য ঢাবির প্রতিষ্ঠা। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নে কলকাতার তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত ও হিন্দু নেতারা এর বিরুদ্ধে স্মারকলিপি দেয়। মক্কা বিশ্ববিদ্যালয় বলেও অনেকে ব্যঙ্গ করেন। কারণ মুসলমানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ব বাংলায় ৯টি কলেজ থাকলেও, ছিল না কোনো উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দাবিকে সম্মান জানিয়ে লর্ড কার্জন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্মতি দেন। (সূত্র: প্রথম আলো, ৩০ জুন ২০২১)

উইকিপিডিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, পূর্ব বঙ্গে মুসলিম সমাজে যে নবজাগরণ শুরু হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তারই ফল। বড়ো আফসোস এবং হতাশার কথা হলো, ঢাবি প্রতিষ্ঠার এই ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানেন না; এমন লোকদেরকে ঢাবিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তৎকালীন অবহেলিত মুসলমানদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে সামনে নিয়েই ঢাবির প্রতিষ্ঠা। এমনকি কথিত আছে, রবিঠাকুরও এর বিরোধীতা করেছিলেন। আজ আমাদের আপামর জনতার ট্যাক্সের পয়সায় চালিত প্রাচ্যের বাতিঘরটি আমাদেরই বিরুদ্ধে?

হ্যাঁ,আজ মুসলমানদের স্বার্থের বিরুদ্ধেই একে ব্যবহার করা হচ্ছে। মুসলিম নারীদের ধর্মীয় অধিকার- হিজাব, নিকাব পরার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয় স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। অথচ নৃবিজ্ঞানের ভাষায় বললে, হিজাব, পর্দা, নিকাব এগুলো হলো একটি জাতির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য। জাতি, বর্ণ ধর্ম ভেদে এক একজন ব্যক্তি তার ধর্মীয় পোশাক পরিধান করবে, এটাই তার অধিকার। এই অধিকার কেড়ে নেওয়া মানে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করা। মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া।

এখন যদি মুসলিম নারীদেরকে জোরপূর্বক মুখ খুলতে বাধ্য করা হয়। পর পুরুষের সামনে চেহারা প্রদর্শন করতে বাধ্য করা হয়, তবে এটা হবে তাদের ধর্মীয় অধিকার হরণ করা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নারী শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষা ও প্রেক্ষাপটে মুখ খুলতে বাধ্য করছেন। এমনকি অশালীন মন্তব্যও করছেন।

বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হলেও, তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এরপর আবার আপিল করা হয়েছে। এভাবে ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় বিধানের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক মন্তব্য প্রচার ও প্রচারণা করার মানে কী? তবে কী এরা আরেকবার মুসলমানদেরকে রাজপথে নামিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চায়?

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যক্তিপরিচয় শনাক্তকরণ করা খুব কঠিন কাজ? তবে আমরা কী সে পথে হাঁটতে পারি না? যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে খ্রিস্টান নারীদেরকে মুখচ্ছবি ব্যতীত এনআইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। উন্নত বিশ্বে তারা যদি তাদের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করণার্থে এমন আধুনিক ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে আমরা করতে পারি না কেন? এ ছাড়া ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রযুক্তির যুগে কেন ধর্মপ্রাণ নারীদেরকে হিজাব নিকাব খুলতে বাধ্য করা হবে? শ্রেণিকক্ষে, পরীক্ষার হলে বাড়তি হয়রানি কেন করা হবে? আমাদের নারীবাদীরা যারা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেন। তারা কী কখনো নারীবান্ধব পুরুষমুক্ত যাবতীয় প্রতিষ্ঠানের কথা বলেছেন? এখানে কী তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নেই?

banner

স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর বয়সেও নারীবান্ধব পরিবেশ কেন হলো না? কেন নারী শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে তাদেরকে শনাক্ত করা যায় না? আজ কেন আমরা আমাদের মেয়েদের জন্য পুরুষ মুক্ত নিরাপদ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি? এ দায় ও ব্যর্থতা কার?

শতভাগ পুরুষ মুক্ত নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি সরকারের গুরু দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তাও আজ অবহেলায় পরিণত হয়েছে। মুখে নারী অধিকার বললেও, আমাদের নারী অধিকার কর্মীরা আজও নারীবান্ধব স্বতন্ত্র কর্মক্ষেত্রের কথা বলেন না। তবে কীভাবে আমার, আপনার, আমাদের মা-বোন, মেয়েরা নিরাপদ জীবন যাপন করবে? কীভাবে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে? আর কীভাবে চেহারা খোলার হয়রানি থেকে বাঁচবে?

লেখক : প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক

এই লেখকে সকল প্রবন্ধ পাবেন এখানে

Source
প্রথম আলো, ৩০ জুন ২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button