Lifestyle

উকুন দূর করার কার্যকরী উপায়: ৯৯% কার্যকরী

এই আর্টিকেলে আমরা উকুন দূর করার তিনটি উপায় জানতে চলেছি। ঘরোয়া উপায় গুলো জানার আগে একটা ওষুধের নাম বলবো যা একবার ব্যবহারেই সব উকুন চলে যায়। তবে অনেকেই ওষুধের চেয়ে প্রাকৃতিক সমাধান বেশি পছন্দ করেন। তাদের জন্য থাকছে প্রাকৃতিক উপায় বা ওষুধ ছাড়াই শুধু চুল ভিজিয়ে উকুন নির্মূল করার উপায়। সবশেষে বলব ভেষজ পদ্ধতি নিয়ে যেখানে রসুন, নারিকেল তেল, নিমের তেল, ভিনেগার ইত্যাদি দিয়ে উকুন দূর করা সম্পর্কে। এই তিনটা পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পরে যেটা আপনার ভালো মনে হয় সেটা ব্যবহার করে উকুন দূর করবেন।

ওষুধের মাধ্যমে উকুন দূর করার উপায়

প্রথমেই উকুন মারা ওষুধের নাম বলি, উকুন দূর করার জন্য অনেকগুলো ওষুধ আছে। এখানে যে ওষুধটার কথা বলছি সেটি আপনি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নিজে নিজে ফার্মেসি থেকে কিনে এনে ব্যবহার করতে পারবেন। ওষুধের নাম হচ্ছে আইভারমেকটিন লোশন ০.৫%। বাজারে কিনতে পারবেন এলআইসি আর নিকলিন নামে। দাম একশ ত্রিশ থেকে দুইশ টাকার মতো। ছয় মাস বা তার বেশি বয়সীরা এই ওষুধ ব্যবহার করতে পারবেন৷ চুল শুকনা অবস্থায় মাথার তালুতে প্রথমে ওষুধ লাগাবেন। তারপর চুলের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত ওষুধটা লাগাবেন। এই ধাপটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরো মাথার তালু আর সবগুলো চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত যাতে ওষুধ মাখানো হয়। তারপর ঘড়ি ধরে ১০ মিনিট এভাবে রেখে পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলবেন। মাথায় শ্যাম্পু বা সাবান দেবেন না। চুল শ্যাম্পু করতে চাইলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা পরে করবেন। এই ওষুধটা একবার লাগালেই সাধারণত সব উকুন মারা যায়। ২০১০ সালের ১৩টি শহরে করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই ওষুধ একবার ব্যবহারেই ৯৫% মানুষের উকুন একদম নির্মূল হয়ে গেছে।

image courtesy by istock

এই ওষুধ কতটা নিরাপদ?

উকুন মারার জন্য এটা খুবই নিরাপদ ওষুধ।

উকুন মারা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?

আর এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে আছে খুশকি হওয়া চামড়া জ্বালা, পোড়া চামড়া, শুষ্ক হওয়া চোখে গেলে চোখ যন্ত্রণা হওয়া খেয়াল রাখবেন চোখে যাতে না যায়। গেলে হাল্কা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।

সবাই কি ওষুধ ব্যবহার করতে পারবে?

আমেরিকায় এটাও একটা কাউন্টার ওটিসি ওষুধ। বছরের পর বছর এমনটা করার পরে যখন দেখা যায় একটা ওষুধ খুবই নিরাপদ এবং কার্যকর, তেমন কোনও সাইড এফেক্ট নাই, ডাক্তারি তত্ত্বাবধান ছাড়াই মানুষ এই ওষুধ প্রয়োগ করতে পারে। সেই সব ওষুধগুলোকে ওটিসি বা ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এখানে ২টি ব্যতিক্রম আছে। যারা গর্ভবতী বা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তারা ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

চুল ভিজিয়ে উকুন দূর করার উপায়

image: pexels

এবার আসি তাদের কথা যাঁরা ওষুধ নিতে চান না ও কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চান না তাঁদের জন্য শেয়ার করছি দ্বিতীয় ফর্মুলা। আপনাকে এই পদ্ধতিটাই প্রথমে চেষ্টা করার পরামর্শ দিব। এই ফর্মুলায় উকুন দূর করতে মোট ২ সপ্তাহ সময় লাগে। এই দুই সপ্তাহ সময় ৪ বার চুল ভিজিয়ে উকুনের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে হয়। দিনগুলো হল- প্রথম, পঞ্চম, নবম ও ১৩তম দিন। অর্থাৎ প্রতিবার চুল আঁচড়ানোর মাঝে তিন দিনের গ্যাপ থাকবে। নিয়মটা বুঝিয়ে বলি উকুন দূর করার জন্য আমরা অনেকেই উকুনের চিরুনি ব্যবহার করি। কিন্তু আচড়ানোর পরে আবার দেখা যায় মাথা উকুনে ভরে গেছে! এমন কেন হয়? উকুনের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালে বড় উকুন গুলো পড়ে যায়। কিন্তু সেই উকুন গুলো যে ডিম পেড়ে রেখেছে সেগুলো তো চুলেই থেকে যায়। এই ডিমগুলি ফুটে উকুন বের হতে সাতদিনের মত সময় লাগে। আবার সেই বাচ্চাগুলো প্রায় সাত দিনের মধ্যে বড় হয়ে নতুন করে ডিম পাড়া শুরু করে। এভাবে মাথা আবার উকুনে ভরে যায়। L এই চক্র ভাঙতে আমাদের এই ১, ৫, ৯, ১৩ ফর্মুলা ব্যবহার করে মোট ৪ বার চুল ভিজিয়ে তারপর মাথা আঁচড়াতে হবে। এভাবে করলে উকুনের ডিম, বাচ্চা উকুন, বড় উকুন সবই দূর হবে।

কী দিয়ে চুল ভেজাবেন?

চুলে ভাল করে তেল দিয়ে তারপরে আঁচড়াতে পারেন। পানি দিয়েও ভেজাতে পারেন। ভেজা চুলে উকুন নড়াচড়া কম করতে পারে। ফলে সহজেই চিরুনী দিয়ে আঁচড়ে ফেলা যায়। প্রতিবার চিরুনী দিয়ে চুলে টান দেওয়ার পরে চিরুনী থেকে উকুন সরিয়ে নেবেন। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটা উকুন মারার কয়েকটা ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকরী। তাই একটু কষ্ট হলেও একটাবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

ভেষজ উপায়ে উকুন দূর করার উপায়

এবার আসি ভেষজ উপায়ে উকুন দূর করা নিয়ে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে ও ইউটিউবে অনেক ভিডিও আছে যেখানে রসুন, নারিকেল তেল, নিমপাতা, টি ট্রি অয়েল, ভিনিগার ইত্যাদি বিভিন্নভাবে চুলে মাখালেও উকুন নির্মূল হবে এমন শতভাগ গ্যারান্টি দেওয়া আছে। রসুনের ঝাঁঝ বেশি রসুনের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। দম আটকে যায় নারিকেল তেল দিয়েও কোনও অক্সিজেন নিতে পারে না৷ এমন অনেক কিছু বলার আছে।

image: pexels

গবেষণায় কী বলে সেটা আমরা একটু দেখি। ২০১৫-২০১৬ সালে ইরাকের কিরকুক প্রদেশে ৫টি স্কুলে গবেষণা হয়েছিল বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে দেখা হয় কোনটায় উকুন দূর করে কিনা। তার মধ্যে ছিল রসুন, আর আপেল ভিনেগার। সেই গবেষণায় দেখা গেছে যে রসুন ৪৮ ঘণ্টার মাথায় রাখার পরেও কোন মরে নাই! আপেল ভিনেগারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে একটা গবেষণা আসে। তাঁরা চুলের উপর বিভিন্ন ধরনের তেল মাখিয়ে সেগুলোর উপর ছেড়ে দিয়ে দেখেছে উকুন কেমন ব্যবহার করে। সেখানে দেখা গেল চুলে নারিকেল তেল বা নিমের তেল থাকলেও উকুন ঠিকই রক্ত শুষে নিচ্ছে, তার খাবার সে ঠিকঠাক খেয়ে নিচ্ছে।

২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের একটি মেডিক্যাল কমিটিও অনেকগুলো গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখেছে টি ট্রি ওয়েল বা ইউক্যালিপটাস অয়েল উকুন দূর করে এমন ভাল কোনও প্রমাণ নেই। ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান নাইস যেখানে ইংল্যান্ডের সব হাসপাতালে চিকিৎসার গাইডলাইন আসে। তারাও অনেকগুলো গবেষণা পরিচালনা করে বলেছে, হার্বাল বা ভেষজ উপায়ে উকুন দূর করার নিরাপদ ও কার্যকর এমন ভাল কোন প্রমাণ নেই। তাই তারা এটার পরামর্শ দিচ্ছে না। আপনি চাইলে এগুলো দিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে চিকিৎসকগণ এমন পরামর্শ দিবে না। কারণ এর পক্ষে প্রমাণ খুব দুর্বল।

যেসব ভুলের কারণে উকুন তাড়াতে ব্যর্থ হই

এবার আসি যে সব ভুলের কারণে আমরা উকুন তাড়াতে ব্যর্থ হই।

এক- বাসার সবার মাথাই চেক করতে হবে যে গুণ আছে কিনা। যাদের মাথায় উকুন আছে সবাইকে একই দিনে চিকিৎসা শুরু করবেন। না হলে আবার একজন থেকে আরেকজনের মাথায় উকুন ছড়িয়ে যাবে।

দুই- বাড়ির যে মানুষটার মাথায় উকুন সেই ব্যক্তির চিরুনী, চুলে ব্যবহার করা ব্রাশ নিয়ম করে প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন।

তিন- উকুনের চিকিৎসা শুরুর ২ দিন আগে পর্যন্ত ব্যবহার করা বিছানার চাদর বালিশের কভার, কাপড়, তোয়ালে যে সব জায়গায় উকুন লেগে থাকতে পারে। সেগুলো গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। সেটা সম্ভব না হলে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ব্যাগের মুখ আটকে দুই সপ্তাহ রেখে দেবেন।

শেষ কথা, চুল ময়লা হওয়া বা অপরিষ্কার থাকার কারণে মাথায় উকুন হয় না। উকুন আসে আরেকজনের মাথা থেকে। চুলে উকুন আছে বলে কেউ যদি আপনাকে নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করে বা নাক সিঁটকায় সেটা তাঁর জানাশোনার অভাবের কারণে। উকুন হওয়ার সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কোনও সম্পর্ক নেই।

এই ক্যাটাগরীর অন্যান্য আর্টিকেল এখানে দেখুন

Rate this Article

Article Rating

Thanks for sharing your review

User Rating: 4.68 ( 3 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button