পৃথিবীতে যখন এসেছি, জীবনের খেলাটা খেলতে হবে ভাল করেই। বেঁচে যখন আছি, বাঁচাটা হোক বাঁচার মতোই। দুনিয়াতে যে শেখার কতো কিছু আছে, এটা আসলে আপনি শেখা শুরু না করলে কখনো অনুধাবনই করতে পারবেন না। বিজনেস, মার্কেটিং, সেলস, হ্যাপিনেস এই সবই একেকটা স্কিল, যা আমাদের শিখতে হয়।
ক্যাশ মেশিন বই সম্পর্কে পাঠকের মতামত
এই বইটিকে একটা বিজনেস মাস্টারপিস বললে বেশি বলা হবে না। একজন উদ্যোক্তার মার্কেটিং কিভাবে বিজনেসের জন্য ম্যাজিক হয়ে ওঠে, কাগজের নোট নয়, কনটেন্ট কেমন করে এই যুগের ক্যাশ হয়ে ওঠে, হিসেব করে তিনি মিলিয়ে দেন কোটি টাকার অংক।
কোচ কাঞ্চন – The Marketing Messiaen of Bangladesh in Twenty First Century কথাটা আপনাদের অনেকের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হলেও, আল্টিমেট এটাই সত্য। ক্যাশ মেশিন বই এর মধ্যে লেখক ৬ কোটি টাকার বিজনেস সিক্রেট বলেছেন। কিন্তু আমি ক্যাশ মেশিন পড়ে বুঝেছি, এটা মাত্র ৬ কোটি নয়, এটা আসলে হাজার কোটি টাকার বিজনেস সিক্রেট।
নিউরো মার্কেটিং
নিউরো মার্কেটিং বুঝতে হলেও আপনাকে ক্যাশ মেশিন পড়া উচিৎ। কারণ আপনার অডিয়্যান্সকে নিউরো মার্কেটিং-এর জালে আটকাতে হলে আপনাকেও নিউরো মার্কেটিং বুঝতে হবে, শিখতে হবে।
বইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠা
ক্যাশ মেশিন বইয়ের “ব্রেইন – দ্য আলটিমেট ক্যাশ মেশিন” অধ্যায়টি খুব যত্ন নিয়ে পড়ার পরামর্শ রইলো। বইটির অনেক গুলো প্যারাগ্রাফ আমার ভালো লেগেছে, তন্মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করছি-
- পেজ – ৩৭: It will be the one who knows humans the most, who wins.
- পেজ – ৬১: Success = Actual Result = Expected Result.
- পেজ ৮২: সম্ভাব্য ক্রেতা লো ট্রাস্ট লিড ম্যাগনেট ট্রাস্ট ওএসও হাই ট্রাস্ট বিজ্ঞাপন ২০ হাজার ক্রেতা।
- পেজ ৮৫: কাস্টমার শুধু ২ টা সময়ে ওয়ার্ড অফ মাউথ করে।
- পেজ ৮৬: প্যালেস রিসোর্ট এর উদাহরণ।
এছাড়াও পেজ ২১, ৯৩, ১০১, ১২৯, ১৩৩, ১৩৫, ১৩৭, ১৫২, ১৫৭ (রিভিউ বড় হয়ে যাবে বলে বিস্তারিত লিখলাম না)
বইটির অধ্যায়গুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যা জটিল ব্যবসার ধারণাগুলোকে সহজে বোধগম্য করেছে। বইটির অন্যতম শক্তি হল কৌশলগত পরিকল্পনার জন্য এর ব্যবহারিক পদ্ধতি। এখানে লেখক শুধুমাত্র তাত্তিক কাঠামোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না বরং বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতার আলোকে সমসাময়িক ঘটনাবলি আলোচনা করেছেন। যা একজন পাঠকের কার্যকরী অর্ন্তদৃষ্টি প্রদান করে এবং উদ্ভাবন ও কৌশলগত চিন্তার জন্ম দিতে পারে। একজন ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তা নিজস্ব ব্যবসায়িক উদ্যোগে বইটির থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার প্রয়োগে সাফল্য অর্জন করতে পারবে আমার বিশ্বাস।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্রফিটেবল ব্যবসা গড়া
মেশিন লার্নিং ও এআই প্রযুক্তির যুগে সবকিছু ছাপিয়ে সবার বোধ হয় চাওয়া একটাই- একটা আস্ত ক্যাশ মেশিন খুঁজে পাওয়া। আর এই বই সন্ধান দেবে সেই আরাধ্য ক্যাশ মেশিনের! বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিজের বিজনেসকে বাস্তবিক ভাবেই একটা ক্যাশ মেশিন বা টাকার খনিতে রুপান্তর করতে পারবেন।
লেখকের ১৭ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতায় লেখা এই বইটিতে রয়েছে লেখকের ব্যবসায় ৬ কোটি টাকার লস এবং সেখান থেকে খুঁজে পাওয়া ৬ কোটি টাকার সিক্রেট রিভিল করার খুঁটিনাটি। রয়েছে বিজনেসকে অটোমেটিক মানি মেকিং মেশিনে রুপান্তর করার যুগান্তকারী সব মেথড, ফ্রেমওয়ার্ক ও প্রিন্সিপাল। দ্য গ্রেটেস্ট ওয়েলথ প্রডিউসিং অ্যাসেট নিজের ব্রেইনকে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারদর্শী করার নানা ফর্মুলা বইটিকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
একটা মেশিন নামক বস্তু বানিয়ে, থিংক ডিফরেন্ট-এর মতো পাঞ্ছ লাইন দিয়ে পৃথিবীর সকল বিজনেস, ব্র্যান্ডিং, আর ফিলসফিকে বদলে দিয়েছিলো অ্যাপল। কোচ কাঞ্চনের ক্যাশ মেশিন সেই চিন্তার নতুন সংস্করণ!
আর সবচেয়ে বড় যে উপলব্ধি সেটা হলো বিজনেসে ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে। পৃথিবীতে জিরো ইনভেস্ট নিয়ে আসা আমরাই যখন বিজনেস শুরু করতে গিয়ে লসের কথাই আগে ভাবি, লেখক করাঘাত করেছেন সেই চিন্তার জায়গাতেও।
ক্যাশ মেশিন বইয়ের বিবরণ
Title | ক্যাশ মেশিন |
Author | মুহাম্মদ ইলিয়াস কাঞ্চন (কোচ কাঞ্চন) |
Publisher | হিয়া প্রকাশনা |
Edition | 3rd Edition, 2024 |
Number of Pages | 160 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
ক্যাশ মেশিন বইয়ের নেতিবাচক দিক
আমার যেহেতু অনেকে বেশি মার্কেটিং, আত্মউন্নয়ন,সেলস ও মোটিভেশনাল বই পড়া হয় তাই নতুনত্ব তেমন পায় নি। মনে হয়েছে, বই গুলো থেকে কিছু কিছু কপি করে সাথে ২-১ টা কথা বলে লেখা হয়েছে। তবে আপনি যদি বই পড়ুয়া না হন, কিন্তু আপনি ১ বইয়ে সব অনেক কিছুই শিখতে চান তাহলে এই বইটি পড়তে পরেন৷ তবে কিছু কিছু জায়গায় বইটা আমাকে অনেক হতাশ করেছে এবং আমার মতে অনেক রিডারকেও হতাশ করবে৷
লেখকের মতে এক্সপার্ট কে নিয়ে এসে জায়গায় জায়গায় বসিয়ে দেন তাহলেই বিজনেসে ম্যাসিভ সাকসেস চলে আসবে যা বুল শিট ছাড়া কিছু না। কারণ প্রথমত এক্সপার্ট হায়ার করার মত ক্ষমতা কি যে মাত্র ব্যবসা শুরু করছে তার কাছে থাকে? সাথে লেখক হয়ত ভুলে গেছে ব্যবসা চাবি মেরে ছেড়ে দেওয়ার আগে, তাকে ব্যবসাটা দাড় করনো লাগেছে। আপনার এই কথা বলার পেছেন যুক্তি রিচার্ড ব্রানসনের যিনি নিজেই ভার্জিন কোম্পানি টিকিয়ে রাখতে পারেন নি! যদি কোম্পানির কর্মচারীদের দ্বারাই কোম্পানি হত তাহলে শাওমি অনেক আগেই আপেলের কর্মচারী সব হায়ার করে আপেলের থেকে বড় হয়ে যেত। কোম্পানি কেমন সেটা ডিপেন্ড করে ভিশন, মিশন, সার্ভিস, ব্রান্ডিং, কোয়ালিটি, ট্রান্সপারেন্সি,ট্রাস্ট ও আস্থার উপর! আপনি একজন বিজনেস কোচ দয়া করে মানুষকে ভুল ভাল বলে নতুন ব্যবসায়ীদের সর্বশান্ত করবেন না।
লেখক ভিডিওতে বললেন ১২ টি ব্যবসা করে ৬ কোটি টাকা লস করেছেন, ভেবেছিলাম তার ভুল গুলো বই এ তুলে ধরবেন কিন্তু তার নিজের মার্কেটিং ছাড়া কিছুই খুঁজে পায়নি। আর ৬ কোটি টাকার যে বিজনেস সিক্রেট এর কথা বলা হয়েছে সেটা বিজনেস ফান্ডামেন্টালের ওভার ভিউ ছাড়া আর কিছু নয়। ব্যক্তিগত মতামত দিলে এখানে খুব ব্যাসিক জিনিস এর ওভার ভিউ দেওয়া হয়েছে যা T. Havr Ekar,Russell Brunson,Seth Godin,Bran Trace, শিমন, Nepolien hill, Jon C Maxwell, Eric Ric এর মত লেখকদের বই পড়েছে তাদের শেখার বা জানার মত ১০% ও নেই। লেখকের মার্কেটিং এর সাথে কাজের মিল না পাওয়ায় অনেকটাই হতাশ।
বইটি সেলিং এর জন্য যতটা ভালো মার্কেটিং ছিল সেই তুলনায় বইয়ের ভিতরের কন্টেন্ট ভাল করতে পারেন নি। যদিও আমি লেখকের মার্কেটিং দেখে ভেবেছিলাম অনেক কিছুই হয়ত শিখতে পারবো কিন্তু বাংলাদেশের ম্যাক্সিমাম কোর্সের ইন্সট্রাকটরদের মত গালগপ্প আর বড় বড় কথা ছাড়া কিছুই পাইনি। লেখক বাইরের বই পড়ে সেগুলো তুলে ধরতে যেয়ে এতটাই ঘোরে ছিলেন, সে ভুলে গেছিল তার অডিয়েন্সরা বাংলাদেশী, এখানে আমেরিকার এক্সামপল চলে না। কারণ আমাদের চিন্তা ভাবনা, মানসিকতা, বাজার পুরাই উলটা।
সরি টু সে বাট আমার বই পড়ার পর সন্দেহ হয়, লেখকের কাছে যারা লাখ লাখ টাকা দিয়ে বিজেনেস ট্রেনিং নেই তারা পরবর্তীতে সফল হয় কিনা। কারণ লেখক বাইরের বইরের যে সব উদাহরণ টানেন সেগুলো ম্যাক্সিমামই আউট ডেটেড৷ এর থেকে লিন স্টার্টাপ, স্টার্ট উইথ হোয়াই, অল মার্কেটার্স আর লায়ার, ডট কম সিক্রেট এর থেকে হাজার গুন বেশি শিক্ষনীয় ছিল।
সকল বইয়ের পাঠক রিভিউ এখানে