রান্নার জন্য ভালো তেল কোনটি (পরামর্শ)

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেল ও চোখ-ধাঁধানো বিজ্ঞাপন আমাদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। কোনটা রেখে কোনটা ব্যবহার করবো এ নিয়ে প্রায় সবাই দোটানায় ভোগেন। সব ধরনের তেলেই ফ্যাট বা চর্বির উপস্থিতি থাকে। চর্বি মানেই যে তা খারাপ, ব্যাপারটি কিন্তু এমন নয়। তেলে সাধারণত স্যাচুরেটেড, মনো-আনস্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যেগুলো রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রার তারতম্য ঘটায়।


“এই আর্টিকেলটি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোন পণ্য প্রমোট করার উদ্দেশ্যে লেখা নয়।”

— আবাজ টিম

রান্নার তেল কি?

রান্নার তেল হল চর্বি, যা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ভিটামিনের মতো প্রয়োজনীয় ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (MUFA), পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (PUFA), এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (SFA) হল তিনটি প্রধান ধরণের ফ্যাটি অ্যাসিড যা রান্নার তেলে পাওয়া যায়।

রান্নার তেলে চর্বির প্রকারভেদ

photo credit: Pixabay

রান্নার তেল ভালো নাকি খারাপ এটা জানার আগে কোন তেলে কি ধরণের চর্বি থাকে তা জানতে হবে। কোন তেলে কোন ধরণের চর্বি থাকে তা জানতে পারলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো তেল বেছে নেওয়া সহজ হবে।

স্যাচুরেটেড ফ্যাট (Saturated fats)

স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেসকল তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি সেগুলো ব্যবহার না করাই স্বাস্থের জন্য ভালো।

ট্রান্স ফ্যাট (Trans fats)

ট্রান্স ফ্যাট এক প্রকার হাইড্রোজেনেটেড তেল। এগুলি সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলিতে পাওয়া যায়। উচ্চ তাপমাত্রায় দাহ্য তেল বা চর্বিও ট্রান্স ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। আমাদের সবার পছন্দের সিঙ্গাড়া, সমুচা, পুরি, বিস্কুট, চানাচুর, চিপসের মতো বেকারি পণ্য গুলো তৈরিতে হাইড্রোজেনেটেড তেল ব্যবহার করা হয়। এগুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ কারণ এটি স্বাস্থ্যের খারাপ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। প্যাকেটজাত খাবার কেনার আগে ট্রান্স ফ্যাট আছে কিনা তা জানতে প্যাকেটের লেবেল ভালো করে পড়ে নেওয়ার পরামর্শ থাকলো।

মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (Monounsaturated fatty acids)

মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটগুলো দেহের কোষের বিকাশ, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। অ্যাভোকাডো, বাদাম ও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ তেল যেমন- ক্যানোলা, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল, চিনাবাদাম, তিলের তেলে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে।

পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (Polyunsaturated fats)

পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত তেল ব্যবহার করা স্বাস্থ্যকর। পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রধানত উদ্ভিজ্জ তেল (সূর্যমুখী, তিল, সয়াবিন, কর্নওয়েল) ও সামুদ্রিক মাছে পাওয়া যায়। এতে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬—এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে, বিষণ্নতা, ক্যানসার, ডিমেনশিয়া ও আর্থ্রাইটিস থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া রুপচাঁদা, ইলিশ, পাঙ্গাশ মাছে ওমেগা-৩ এর উৎকৃষ্ট উৎস। আর ওমেগা-৬ সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ কমে যায়।

রান্নায় কোন তেল ব্যবহার করা উচিত?

সবার জন্য সব তেল উপযুক্ত নয়। ধরুন একজন হার্টের রোগীর জন্য যে তেল ভালো হবে একজন দুর্বল লিকলিকে দেহের মানুষের জন্য সেই তেল ভালো হবে না। তাই স্বাস্থ্য ভেদে তেল বাছাইয়ে ভিন্নতা আসবে। নিচে রান্নার তেলের গুণাগুণ অনুযায়ী আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো তেল বেছে নিন।

অলিভ অয়েল (Olive Oil)

রান্নায় অলিভ অয়েলে ব্যবহার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন, বিশেষ করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে রান্না করার জন্য সবচেয়ে ভালো কারণ এটি প্রক্রিয়াজাত ও পরিশোধিত হয় না, যার কারণে এর গুণমান খুবই ভালো। অলিভ অয়েলে প্রচুর ক্যালরি থাকে। তাই রান্নায় স্বল্প পরিমাণ অলিভ অয়েল কম আঁচের রান্নায় ব্যবহার করুন।

অ্যাভোকাডো তেল (Avocado Oil)

অ্যাভোকাডো তেলকে খুব স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। উচ্চ তাপে এই তেলে রান্না করা হয়। এর স্বাদ খুবই কম। অ্যাভোকাডোর মতো এর তেলও ক্রিমযুক্ত। অ্যাভোকাডো তেল মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ। তবে এর দাম বেশি হয়ে থাকে।

নারকেল তেল (Coconut Oil)

রান্নার জন্যে ব্যবহৃত নারকেল তেল একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। নারকেল তেল হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তবে নারকেল তেল বাটারের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। তাই তরকারীতে এর ব্যবহার করা যায়। অথবা নাস্তা তৈরিতে নারকেল তেল ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যাবে।

ক্যানোলা তেল

আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশে সরিষার মতোই দেখতে ক্যানোলার বীজ থেকে ক্যানোলা তেল তৈরি হয়। হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ক্যানোলা তেল বেশ ভালো। এই তেলের পুষ্টিগুণ সয়াবিন তেলের চেয়ে বেশি। স্যাচুরেটেড ফ্যাট খুব কম কিন্তু পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওমেগা-৩ ফ্যাট এই তেলে বেশ ভালো মাত্রায় থাকে।

রাইসব্রান তেল

রাইসব্রান তেল হয় ধানের তুষ থেকে। রাইসব্রান অয়েল সয়াবিন তেলের মতো একটি ভোজ্য তেল যা কোলেস্ট্রেরলমুক্ত ও প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। এই তেল কে হার্টের জন্য উৎকৃষ্ট তেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া এই তেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা হার্ট ব্লোক, হার্ট এটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে

সূর্যমুখীর তেল (Sunflower oil)

রান্নায় এই তেল ব্যবহার করলে আমাদের শরীরে দিনে যে পরিমাণ ভিটামিন-ই এর চাহিদা রয়েছে তার প্রায় 30% পূরণ করে। সূর্যমুখী তেলে ওমেগা -6 ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি, যা আপনার শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে রান্নায় অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সয়াবিন তেল (Soybean oil)

সয়াবিন তেল বেশ জনপ্রিয় ভেজিটেবল অয়েল। তবে এই তেল ভাজির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা ভালো। শাক রান্নার ক্ষেত্রে বা ভাজাপোড়ার ক্ষেত্রে সয়াবিন তেল ব্যবহার করা যায়।

পাম অয়েল (Palm oil)

উচ্চ তাপে কোনোকিছু রান্না করলে পাম অয়েল ব্যবহার করা যায়। এই তেলের নিজস্ব ঘ্রাণ নেই তাই রান্নায় ব্যবহার করলে খাবারের স্বাভাবিক ঘ্রাণই থাকে। তরকারী কিংবা মচমচে ভাজা জাতীয় খাবারে এই তেল ব্যবহার করতে পারবেন।

রান্নার জন্য কোন তেল ব্যবহার করা ঠিক না?

আপনি রান্নার জন্য যে তেলই ব্যবহার করুন না কেন, এর ভালো-মন্দ নির্ভর করে কিভাবে এবং কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন তার উপর। রান্নার আগে মনে রাখবেন, তেল যত ভালোই হোক, খাবারে অতিরিক্ত তেলের ব্যবহার সবার জন্যই ক্ষতির।

FAQs (Frequently Asked Questions)

Q. স্বাস্থ্যকর তেল কোনটি?
Ans: অলিভ, অ্যাভোকাডো, সরিষা ও চিনাবাদামের তেল বেশি স্বাস্থ্যকর।

Q. কোন তেল এড়িয়ে চলা উচিত?
Ans: রান্নায় পাম, সয়াবিন ও নারকেল তেল ব্যবহার করবেন না।

Q. কোন তেল খাওয়া হার্ট ও লিভারের জন্য ভালো?
Ans: লিভারের জন্য অলিভ ওয়েল (এক্সট্রা ভার্জিন তেল টা সিলেক্ট করুন)। আর হার্টের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে সরিষা, অলিভ ও সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করুন।

Q. রান্নায় সয়াবিন নাকি সরিষা তেল?

Ans: অবশ্যই দুটোর মধ্যে সরিষার তেল ভালো।

সকল স্বাস্থ্য টিপস এখানে দেখুন

Exit mobile version