রাত এবং পর্ণোগ্রাফি: যে আঁধারের রং নীল
রাতের অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে এলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা বেড়ে যায়। একবার চিন্তা করে দেখুন তো – আমাদের হাতে থাকা স্মার্টফোন গুলো শয়তানের সেই ওয়াসওয়াসার কাজে “মেঘ না চাইতে জল” হিশেবে আবির্ভূত হয়েছে কি না! এখনকার সময় পর্নোগ্রাফি, অশ্লীললতার সাথে জড়ানোর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে আমাদের হাতে থাকা স্মার্টফোন।
রাতে সাধারণত মানুষের তেমন কাজ থাকে না। কিন্তু যুগ এতো বদলেছে যে- কাজ না থাকাটাই এখন যেন সবচেয়ে বড় কাজ। গভীর রাত পর্যন্ত স্মার্টফোনে চোখ ডুবিয়ে রাখা, মাইলের পর মাইল সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং, নানান ভিডিও দেখা, গেমস খেলা ইত্যাদি করতে যেন আমাদের কোনোই ক্লান্তি নেই। শয়তান তাকে বেহুদা কাজে সময় ব্যয় করতে সারাক্ষণ ফুসলায়। শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে আস্তে আস্তে এ ভিডিও থেকে ও-ভিডিও, এই সাইট থেকে ওই সাইট, এই লিঙ্ক থেকে ওই লিঙ্ক করতে করতে সে যে কখন কোন চোরাবালিতে ডুবে যায়, তার কোনো খেয়াল থাকে না। সে একটা মজা পেয়ে যায় এবং বুঝতে পারে এ-সকল কাজে ব্যয় করার জন্য রাতটাই যুতসই সময়। সে অপেক্ষা করে থাকে- কখন রাত নামবে, কখন সে একাকী হবে, কখন তার আশেপাশে আর কেউ থাকবে না এবং কখন সে আবার ডুব দেবে প্রতিদিনের চোরাবালিতে। শয়তান তাকে এমনভাবে শৃঙ্খলবন্দী করে রাখে যে- এই শৃঙ্খল ভাঙার ব্যাপারে তার ভেতর কোনো তাড়নাই কাজ করে না।
সূরা আল-ফালাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেই অন্ধকার রাতের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়া শিখিয়েছেন, যে অন্ধকার রাতে মানুষ ডুব দেয় আরও গভীর অন্ধকারে। ঘরজুড়ে অন্ধকার, কিন্তু কোনো এক কোণায় ফোন থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে এক টুকরো নীল আলো। সেই নীল আলো মানুষকে টেনে নিয়ে যায় নীল-রঙা অন্ধকারের জগতে। ঊষার রব আমাদেরকে সেই অন্ধকার আর তার অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকবার তাওফীক দান করুন।
মৃত্যুর মাধ্যমে যখন আমরা হারিয়ে যাবো দুনিয়া থেকে, যখন পাড়ি জমাবো অনন্ত আখিরাতের পানে, তখন আমাদের জন্য হাহাকার করবে জমিনের সেই অংশ, যে অংশে আমি কপাল ঠুকিয়ে আমার মালিককে সিজদাহ করতাম, অশ্রু ঝরাবে আসমানের সেই দরোজা, যা দিয়ে আমার আমলগুলো উত্থিত হতো আর নেমে আসতো আমার রিযক্—এটুকু জানার পরে আমার কী করা উচিত? আমাদের কি উচিত নয় আজ থেকে আর্লাহর জন্য জমিনে সিজদাহর পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেওয়া? আমলকে আরও বেশি বেশি বাড়িয়ে নেওয়া, যাতে করে আমার জন্য আসমানের সেই দরোজার ব্যথার মাত্রাটা আরও অনেক অনেক বৃদ্ধি পায়? যাতে আমার শূন্যতাটুকু তারা আরও অনেক বেশি করে অনুভব করে?
জীবনের বেলা শেষে যখন আমার পায়ের চিহ্ন এই দুনিয়ার ধুলো- মাটিতে পড়বেনা, সেই সময়ের জন্য কি কোনো উপলক্ষ্য তৈরি করে রেখেছি, যাতে আমাদের মৃত্যুর পরে জমিন আর আসমানের কোথাও আমাদের জন্য হাহাকার তৈরি হয়, নাকি আমাদের অবস্থা ফিরআউন আর তার বাহিনীর মতো যাদের মৃত্যুতে জমিন আর আসমানের কোথাও কোনো সাড়াশব্দ পড়েনি, যাদের জন্য কাঁদেনি আল্লাহর কোনো জমিন আর অশ্রুপাত করেনি কোনো আসমানি দরোজা?
বই রিভিউ নিয়ে আরো পড়ুন এখানে