মেমসাহেব উপন্যাসের পাঠক রিভিউ: নিমাই ভট্টাচার্য
“যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক,
তারা তো পারে না জানিতে
তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ
আমার হৃদয়খানিতে”
উপন্যাসটির শুরু হয় উপর্যুক্ত কয়েকটি লাইন দিয়ে।
মেমসাহেব উপন্যাস রিভিউ
ছোটবেলায় মা কিংবা দিদি কারোই স্নেহ পাননি এক রিপোর্টার বাচ্চু, যার লিখা দোলাবৌদিকে চিঠি নিয়ে একটি উপন্যাস যেখানে মুল কেন্দ্রবিন্দু ‘মেমসাহেব’। একজন সামান্য মাইনে প্রাপ্ত রিপোর্টারের আস্তে আস্তে জীবনে বিশাল উন্নতি হওয়ার এক গল্প। যেখানে সেই রিপোর্টার মেমসাহেবের হাত ধরে এতদূর পর্যন্ত এগিয়ে যায়।
মেমসাহেব রিপোর্টারের জীবনে যখন আসে, তখন রিপোর্টারের বেতন ৫০ টাকা আর মেমসাহেবের তখন বেতন থাকে ২৫০ টাকা।
সেই সামান্য রিপোর্টারকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী করে তোলে মেমসাহেব তার অফুরান ভালোবাসা দিয়ে। সামান্য মাইনে দিয়ে যার রোজ চলে যেতো, সেই ব্যাক্তিকে বিভিন্নধর্মী কাজে আগ্রহসহ নতুন এক জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখায় মেমসাহেব। রেলগাড়িতে প্রথম দেখা শ্যাম বর্ণের সেই মেয়েটিই এক সময় হয়ে উঠে রিপোর্টারের জীবনের এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। মেমসাহেবের মেজদির সাহায্যে সবকিছু আরো সহজ হয়ে যায়। এতদিনের এত স্বপ্ন, দুজনের সবকিছু যেন সত্যি হওয়ার পালা। ফাল্গুনে বিয়ে করে মেমসাহেবকে ঘরে তোলার কথা। আগে থেকেই এ জন্যে কত পরিকল্পনা, গ্রীন পার্ক নামক স্থানে নতুন বাসা ঠিক করে যাবতীয় সব কিছু তৈরী করে রাখা।
মেমসাহেবের শখের রকিং চেয়ার, অর্গান, হেয়ার-ড্রায়ার, বাগান সব কিছু ঠিক করে রাখার পর কি হলো, তা জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে একদম শেষ পর্যন্ত….
পরিশেষে, বইটি পড়ে যতটা আশা করেছিলাম হ্যাপি এন্ডিং, পুরোটাই হতাশ করে দিলো লেখক। কারো যদি যেচে নিজের মন খারাপ করার ইচ্ছে থাকে তাহলে অবশ্যই বইটি পড়বেন।
মেমসাহেব উপন্যাসের লিংক
নিমাই ভট্টাচার্য সম্পর্কে কিছু তথ্য
বাংলা সাহিত্যের এই খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক নিমাই ভট্টাচার্য ১৯৩১ সালের ১০ এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি নিবাস তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার (বর্তমান জেলা) শালিখা থানার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে। তাঁর পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
ঔপন্যাসিক নিমাই ভট্টাচার্যের স্ত্রী
নিমাই ভট্টাচার্য বাংলাদেশের বগুড়া জেলার কালীতলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কন্যা দীপ্তি ভট্টাচার্যকে বিবাহ করেন। কলকাতার টালিগঞ্জের শাশমল রোডের বাসায় বসবাস করতেন তিনি।
জীবনের টানে, জীবিকার গরজে কক্ষচ্যুত উল্কার মত এশিয়া-আফ্রিকা ইউরোপ- আমেরিকা, গ্রাম-গঞ্জ, শহর -নগর ঘুরে বেড়িয়েছেন নিমাই ভট্টাচার্য। যারা তাঁকে ভালবেসে কাছে নিয়েছেন, তাঁদের সংগে লেনদেন হয়েছে হাসি-কান্না, স্নেহ-প্রেম ভালবাসার। হঠাৎ করেই একদিন তাঁদের কথায় লিখতে শুরু করলেন গল্প-উপন্যাস।
নিমাই ভট্টাচার্যের সাহিত্যিক হয়ে ওঠার ইতিহাস
নিমাই ভট্টাচার্যের সাহিত্য চিন্তা তাঁর জীবনচর্চার একান্ত অনুগামী হয়ে দেখা দিয়েছে। ১৯৬৩ সালে তাঁর লেখা একটি উপন্যাস কলকাতার সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং সাহিত্যামোদীদের নিকট ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। পরবর্তীকালে ‘রাজধানী নৈপথ্য’ রিপোর্টার. ভি. আই. পি এবং পার্লামেন্ট স্টীট নামক চারখানি উপন্যাস ঐ একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিমাই ভট্টাচার্য পূর্ণোদ্যমে আরো আরো উপন্যাস লেখা শুরু করেন।
নিমাই ভট্টাচার্যের লেখা উপন্যাসের তালিকা
- মেমসাহেব
- ডিপেস্নাম্যাট
- মিনিবাস
- মাতাল
- ইনকিলাব
- ব্যাচেলর (বই লিংক)
- ইমনক্যলাণ
- ডিফেন্স
- কলোনী
- প্রবেশ নিষেধ
- কেরানী
- ভায়া ডালহৌসী
- হকার্স কর্নার
- রাজধানী এক্সপ্রেস
- নিমন্ত্রণ
- নাচনী
- অ্যাংলো ইন্ডিয়ান
- ডার্লিং
- ম্যাডাম
- ওয়ান আপ-টু-ডাউন (বই লিংক)
- গোধুলিয়া
- প্রিয়বরেষু
- আকাশ ভরা সূর্য তারা
- মোগল সরাই জংশন
- ইওর অনার
- ককটেল
- অনুরোধের আসর
- যৌবন নিকুঞ্জে
- শেষ পরানির কড়ি
- হরেকৃষ্ণ জুয়েলার্স
- পথের শেষে
নিমাই ভট্টাচার্যের সকল বইয়ের লিংক
নিমাই ভট্টাচার্যের লেখা উপন্যাসগুলোতে বিষয়গত বৈচিত্র্যতার ছাপ প্রস্ফূটিত হয়ে উঠেছে। কোন কোন উপন্যাসে তিনি রাজধানীর অন্দর মহলের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা অভিজাত সমাজের কুৎসিত রূপের চিত্র তুলে ধরেছেন। কোথাও নীচু তলার মানুষের সুখ-দুঃখের জীবনকাহিনী চিত্রিত হয়েছে। তাঁর লেখায় কোথাও কোথাও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদও লক্ষ্য করা যায়। আবার অনেক উপন্যাসে সোনালী আনন্দ দিনের বিলাপ লক্ষ্যণীয়। তাঁর লিখিত উপন্যাসগুলো সাহিত্যরস সমৃদ্ধ ও সুখপাঠ্য।
Courtesy by: Sumaiya Ahmed Nusrat & goodreads
সকল বইয়ের পাঠক রিভিউ এখানে