Health & Beauty

কোমল পানীয় কি সত্যিই কোমল?: স্বাস্থ্য টিপস

অফার পেতে এখানে দেখুন

কাউকে যদি বলা হয় ‘কী খাবেন, ড্রিংকস, নাকি জুস?’ খুব কম লোকই উত্তর দেবে, ‘আমার এক গ্লাস সাদা পানি হলেই চলবে।’ কারণ আমাদের ধারণা, এক গ্লাস কোমল পানীয় বা ফলের রস অনেক বেশি ক্যালরি-বর্ধক। আর সাদা পানি তো কেবল সাদা পানিই।

তাছাড়া হাতের নাগালেই পাওয়া যায় দেশি বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোমল পানীয় যাকে আবার আদর করে ডাকা হয় এনার্জি ড্রিকংস। খেতে অবশ্য বেশ মজা হলেও আমরা অনেকেই জানি না যে এই সব এনার্জি ড্রিকংস গুলোতে আসলে কি থাকে। এই আর্টিকেলে কোমল পানীয় নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে বিষয়গুলো নিয়ে কৌতুহল রয়েছে সেগুলো তুলে ধরার হয়েছে।

কোমলপানীয়র ইতিহাস অর্ধশত কালের। শুরুর দিকে পানি, চিনি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, লেবুর জুস দিয়ে সফট ড্রিকস তৈরি করা হলেও কালের বিবর্তনে এতে এসেছে উপাদানগত পরিবর্তন। যোগ হয়েছে ক্যাফেইন, কখনো বা অ্যালকোহল, অপিয়েট। ক্যাফেইন যোগ করার কারণ হলো, এটি মস্তিষ্ক উত্তেজিত করে। ফলে নিজের মধ্যে ভালো লাগা শুরু হয়।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয় খাওয়ার চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোমল পানীয় এর সাথে যুক্ত হয়েছে এনার্জি ড্রিংকস। প্রচন্ড গরমে একটু তৃষ্ণা মেটাতে এক চুমুক ঠাণ্ডা কোমলপানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস যেন প্রশান্তির আরেক নাম। এসব কোমল পানি ও এনার্জি ড্রিংকসের চাকচিক্যময় বিজ্ঞাপন আর নানা রকম প্রলোভনে এগুলো দেদারছে বিক্রিও হচ্ছে । কিন্তু এসব কোমল পানীয়ে কী আছে, আর মানবদেহের ওপর এর কি প্রভাব পড়ে এসব বিস্তারিত বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে।

কোমল পানীয় কি হারাম?

অধিকাংশ কোমল পানিতে কার্বন, মিষ্টি জাতীয় ও সুগন্ধযুক্ত পদার্থের উপাদানের ও ক্যাফেইন থাকে। তাই বাংলাদেশে যেসকল পানীয় বা Soft Drinks গুলোতে মাদকের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

কোমল পানীয়তে pH এর মান কত?

২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ পানির pH ৭ হলে পানির পিএইচ স্কেলের নিরপেক্ষ মান হিসেবে ধরা হয়। যে পানীয়ের pH মান যত কম সে পানীয় তত এসিডিক। কোনো পানীয়ের pH মান ৫.৫ বা তার কম হলে সে পানীয় শরীরের জন্যে ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়। সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপারটি হলো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোমল পানীয়ের প্রত্যেকটির মান ৩-এর কম। কোমল পানীয় পানের ফলে শরীরে ক্রমান্বয়ে জমা হতে থাকা এই এসিড দাঁত ও হাড়সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতিসাধন করে।

কোমল পানীয় খেলে কি মোটা হয়

অধিকাংশ কোমল পানীয়তেই প্রচুর পরিমাণ চিনি থাকে। এই চিনি শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। যার ফলে শরীর মোটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া যেকোন ঠাণ্ডা পানীয় খেলে খাবারের সঙ্গে ১৭% বেশি ক্যালরি গ্রহণ হয়।

কোমল পানীয়তে কোন গ্যাস থাকে

কোমল পানীয়তে উচ্চ চাপে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস দ্রবীভূত করা থাকে। বোতলের ক্যাপ খুললে উচ্চ চাপের কারনে গ্যাস শব্দ করে বের হয়ে যায়। ফলে কিছু সময় গ্যাসের বুদবুদ ওঠে।

কোমল পানীয় কি হজমে সাহায্য করে?

কোমল পানীয়তে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস দ্রবীভূত থাকে বলে এটা ঢেঁকুর হিসেবে উঠে এসে পেটের গ্যাস থেকে কিছুটা আরাম দেয়। তাই ভরপুর খানাপিনার পর এটা অনেকে খেয়ে ভাবে হজমে সাহায্য করছে। কিন্তু কোমল পানীয় প্রকৃতপক্ষে খাবার হজমে সাহায্য করেনা। মনে রাখতে হবে প্রত্যেকের শরীরে সয়ংক্রিয় পরিপাক বা হজম প্রক্রিয়া আছে, আর সেটা যথাযথভাবে কাজও করে থাকে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন অত্যাচারের মাধ্যমে আমাদের শরীরের সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত যন্ত্রপাতিগুলোকে দুর্বল করে ফেলছি, আর প্রতিনিয়ত বিকল্প খুঁজে ফিরছি।

কোমল পানীয় খেলে কি হয়

এই ধরনের পানীয় শরীরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দেয় যা পরবর্তীতে হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা সৃষ্টি করার পাশাপাশি ক্ষুধামন্দা, অম্লতা বা অ্যাসিডিটি, দাঁতের ক্ষয় বা মেদবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অনেক কোমল পানীয়ের মধ্যে আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে ক্যাফেইন রয়েছে।

কোকাকোলা খেলে কি হয়

একটি ৩৫৫মি.লি এর কোকের ক্যানে প্রায় ১০চা চামচের মত চিনি থাকে। এই অতিরিক্ত চিনি দেহের গ্লুকোজের মাত্রার সাথে দেহে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায় যা শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অন্যদিকে অতিরিক্ত চিনি ফ্যাট হিসেবে শরীরে থেকে যায় যা দেহের ওজন বৃদ্ধি করে ফেলে। আর এই অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। এছাড়াও এই চিনি দাঁতের গর্তজনিত ক্ষয়ের সাথে সাথে দাঁতের এনামেল হলুদ করে ফেলে।

খালি পেটে কোক খেলে কি হয়

খালি পেটে চিনি বা চিনির তৈরি খাবার খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। কখনোই খালি পেটে কোকের কোল্ড ডিংক্সস খাওয়া ঠিক নয়। এগুলো হজম শক্তি নষ্ট করার সাথে ভবিষ্যতে লিভার কিংবা কিডনি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই জেনে শুনে নিজের ক্ষতি করা মোটেই ঠিক নয়।

স্পিড খেলে কি হয়

স্পীড এনার্জি ড্রিংকসের মত এসব কোমল পানীয় তৈরিতে নানা কেমিক্যাল মিশ্রণের প্রয়োজন হয়। যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব ড্রিংকস মুলত উত্তেজনা বর্ধক যা সাময়িকভাবে প্রশান্তি দিলেও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

কোকাকোলা তৈরির উপাদান

পৃথিবীতে গোপন যত বিষয় আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কোকাকোলার রেসিপি। যুগ যুগ ধরে অতি বিশ্বস্ত লোক ছাড়া কোকাকোলার এই রেসিপিটি সম্পর্কে কেউ জানতো না।

গোপন ফরমুলার উপাদানগুলো হল-

  • কার্বোনেটেড ওয়াটার
  • চিনি (সুকরোজ বা হাই-ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ দেশ বা এলাকার ওপর ভিত্তি করে)
  • ক্যাফেইন
  • ফসফরিক এসিড বা ক্যারামেল (ই১৫০ডি)
  • প্রাকৃতিক ফ্লেভার বা স্বাদ

বাংলাদেশের কোমল পানীয়

পানীয় শ্রেণিতে দ্বিতীয় সেরা কোমল পানীয়ের ব্র্যান্ড সেভেন আপ। এটি কেনা হয় দেশের ৩৩ শতাংশ পরিবারে। পানীয়ের শ্রেণিতে সেরা পাঁচের মধ্যে বাকি তিন ব্র্যান্ড হলো ব্রুক বন্ড, সিলন ও হরলিকস।

সেভেন আপ কি দিয়ে তৈরি হয়?

১৯২৯ সালের অক্টোবর মাসে চার্লস লীপার গ্রিগ, উদ্ভাবন করলেন এক নতুন কোমল পানীয়ের ফর্মুলার, যার নাম দিলেন ‘বিব-লেবেল লিথিয়েটেড লেমন-লাইম সোডাজ’। অল্প কিছুদিন পরেই এই নাম পাল্টে ওটা হয়ে গেল ‘সেভেন আপ লিথিয়েটেড লেমন সোডা’। অবশেষে ১৯৩৬ সালে এটা হলো কেবলই ‘সেভেন আপ’।

সেভেন আপ কি দিয়ে তৈরি হয়?

সেভেন আপের একেবারে মূল ফর্মুলার একটি উপাদান ছিল লিথিয়াম সাইট্রেট। সেসময় ম্যানিক ডিপ্রেশনের চিকিৎসার জন্য এই উপাদানটি ব্যবহার করা হতো। ১৯৪৮ সালে মার্কিন সরকার কোমল পানীয়তে এই উপাদানের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে সেভেন আপ ও লিথিয়াম সাইট্রেটের ব্যবহারও বন্ধ করা হয়। ওদিকে সোডিয়ামের পরিমাণ কমাতে সোডিয়াম সাইট্রেটের বদলে যোগ করা হয় পটাসিয়াম সাইট্রেট।

সেভেন আপকে কেন এই নাম দেয়া হলো

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, গ্রিগ কোনোদিনই খোলাসা করে বলেননি এই নামের বিশেষত্ব কী। ফলে এই সংক্রান্ত বেশ কিছু তত্ত্ব আছে, কিন্তু সেসবের মাঝে কোনটিকে আপনি বেছে নেবেন তা একান্তই আপনার ব্যাপার!

১) সেভেন আপের মূল ফর্মুলায় ছিল ৭টি উপাদান: চিনি, কার্বোনেটেড ওয়াটার, লেমন ও লাইম অয়েলের নির্যাস, সাইট্রিক এসিড, সোডিয়াম সাইট্রেট, এবং লিথিয়াম সাইট্রেট।

২) ৭-আউন্সের বোতলে করে শুরুতে বিক্রি হতো এই কোমল পানীয়টি।

Image source: Wallpaper Tip
সেভেন আপের একটি পুরাতন বিজ্ঞাপন; Image source: Ryan Khatam/Flickr

কোমল পানীয় এর ক্ষতিকর দিক

খাওয়ার-দাওয়ার পর কোমল পানীয় পান এখন একধরণের ফ্যাশনে রুপ নিয়েছে। বাজারের এসব কোমল পানীয় পানে আমরা নিজের অজান্তেই শরীরের কত বড় ক্ষতি করছি তা বুঝতে চাই না। এখন দেখে নেওয়া যাক কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিকসমূহঃ

ক্যান্সারঃ কোমল পানীয়তে ক্যারামেল কালার ব্যবহার করা হয়, যা কারসিনোজেন (ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ) হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া ‘অত্যধিক কোমল পানীয় সেবনের ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পায়, যা মানবদেহের জন্য ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।’

দাঁতের ক্ষতিঃ কোমল পানীয়তে কার্বন থাকে এবং এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান থাকে মুখের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিশে দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দেয়। ফলে দাঁতে স্পট ও গর্ত করতে সাহায্য করে। সেই সাথে দাঁতের এনামেল নষ্ট হওয়ার ফলে দাঁত দুর্বল হয়ে ক্ষয় বা ভেঙ্গে যায়। মানুষের শরীরের এই ন্যাচারাল গোল্ড যার একবার ভেঙ্গে গেছে সেই জানে এর গুরুত্ব কত।

হাড় ক্ষয়ঃ কোমল পানীয়তে ভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড দ্রবীভূত অবস্থায় থাকায় পানীয় খাওয়ার ফলে হাড়ের অনেক ক্ষতি হয়। এর মধ্যে থাকা উপাদানগুলি হাড়ের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়ামকে নষ্ট করে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় ভীষণ ভাবে। বিশেষ করে মহিলাদের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বয়স ৩০ পার হলেই হাড়ের জোড় আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

হৃদরোগঃ কোমল পানীয় ‘মেটাবলিক সিন্ড্রোম’ বা বিপাকীয় প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায় যা ক্রমেই হৃদরোগের দিকে ঠেলে দেয়। যারা নিয়মিত কোমল পানীয় নেন, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

কিডনি রোগঃ যেসকল কোমল পানীয়তে ফসফরিক অ্যাসিড রয়েছে সেগুলো পানের ফলে মূত্রনালীর বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয় সেই সাথে তা কিডনি বা বৃক্ক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

বৃক্ক ও যকৃৎঃ প্রতিদিন একবার কার্বোনেইটেড পানীয় খেলে কিডনি বা বৃক্কে পাথর হওয়া সহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। যকৃতে যেসব রোগ হয় তার জন্য কোমল পানীয় বিশেষভাবে দায়ী।

ডায়াবেটিসের কারণঃ নিয়মিত কোমল পানীয় পান করলে টাইপ-টু ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ঠাণ্ডা পানীয় খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বহুগুণে বাড়ে।

পানির বোতল সম্পর্কে জানতে এখানে দেখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button